| |
               

মূল পাতা আরো সম্পাদকীয় কোন পথে দেশের আগামীর রাজনীতি? 


কোন পথে দেশের আগামীর রাজনীতি? 


সৈয়দ শামছুল হুদা     22 September, 2022     12:09 PM    


দেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই নানা মহল থেকে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি এজেন্সিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। ক্ষমতার বলয়ে কারা, কতটুকু  নিয়ন্ত্রন আরোপ করতে পারবে, কীভাবে করবে, কতদূর থেকে কলকাঠি নাড়া যাবে, এসব নিয়ে বহুমুখি শক্তির সক্রিয়তা দেখা লক্ষ্য করা যায়। মাননীয প্রধানমন্ত্রী বারবার একটি কথা বলেন, নির্বাচন এলেই কিছু মানুষ নানামুখি ষড়যন্ত্র শুরু করে। অর্থাৎ তিনি যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিমান পলিটিশিয়ান, তা্ই তিনি খুব ভালো করেই জানেন, এসব বিষয় নিয়ে কারা মাথা ঘামায়? আর মাথা ঘামানো যে শুরু হয়ে গেছে সেটাও তিনি টের পাচ্ছেন। 

আওয়ামীলীগ সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড সমাপ্তির পথে। ৪র্থ দফাতেও একইভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে কী না, সেটা নিয়ে দৌড়ঁঝাপ শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই তিনি ৪ দিনের ভারত সফর শেষ করে এসেছেন। সফরের পুর্বে রাষ্ট্রদূত এবং অনেক মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বলেছেন, এ সফরে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হবে না। তার মানে এই সফরটা শুধু বিশেষভাবে নির্বাচনী ভাবনা নিয়েই হয়েছে এটা বিশ্বাস করা যায়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সেখানেও তিনি আগামী নির্বাচন ও সরকার নিয়েই যে নানামুখি তদবীর করবেন সেটা বলাই বাহুল্য। 

অপরদিকে দেশের ছোট-বড় সবগুলো বিরোধীদল নির্বাচন নিয়ে তারাও তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। যে সকল দলের রেজিষ্ট্রেশন নেই, যেমন গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া, এবি পার্টির সোলায়মান চৌধুরী প্রমুখেরাও দৌঁড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। এছাড়া ইসলামপন্থী দলগুলোও তৎপর হয়ে উঠেছে। কী হতে যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে তা কেহই  এখনো জোর দিয়ে বলতে পারছে না। লীগ সরকারও না। বিশেষ করে গত ১৩/১৪বছরে বিরোধী দলগুলো কোণঠাসা হতে হতে তাদের পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। তারা দেশে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেওয়া শুরু করেছে। এছাড়া প্রধান বিরোধী দল এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থান করেই রাজনীতি চালাচ্ছেন। এবিপার্টির মূল মাস্টার মাইন্ড ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক তিনিও বিদেশ থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। সবগুলো বিরোধী দলের বড় একটি অংশ এখন প্রবাসে। যার ফরে সরকারের ওপর নানা সেনশন আরোপ সম্ভব হচ্ছে। 

এ ছাড়া দেশে টিকতে না পেরে বড় একটি মিডিয়া সেল বিদেশ থেকে সরকারের নানা ব্যর্থতা জাতির সামনে তুলে ধরছে। তারা বিদেশে থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে থেকেই এসব কাজ করছেন। দেশে যথেষ্ট প্রভাবও সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন, কনক সরওয়ার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এদের নানামুখি তৎপরতাও সরকারের জন্য মাঝে মাঝে বিব্রতকর সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার এবং এসপি বাবুল আক্তারকে নিয়ে একটি প্রকাশিত রিপোর্ট বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দর্শক মহলে। মাঝে মাঝেই এরকম হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচনটা সরকার এককভাবে অতীতের মতো করতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট বিরোধী দল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাঠে কামব্যাক করেছে। তারা ফাইট করছে। সর্বশেষ মুন্সিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তাদের দুজন কর্মী নিহত হয়েছে।  

এহেন প্রেক্ষিতে কী হবে পারে আগামী নির্বাচনের কৌশল? তা নিয়ে প্রতিটি মানুষই নানামুখি হিসাব কষছে। বাতাসে এখন অনেক গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, সবগুলো ইসলাম দল মিলে একটি জোট হতে পারে। সেখানে জামায়াত চরমোনাইও থাকতে পারে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে মাইনাস ফর্মূলায় রেখে বড় একটি জোট হবে ইসলামপন্থীদের। অপরদিকে জাতীয় পার্টিও এরশাদীয় নয়-ছয় শুরু করে দিয়েছে। তারা আসলে লীগের পক্ষে খেলবে, নাকি বিএনপির সাথে খেলবে, নাকি তাদের নেতৃত্বেও একটি জোট হবে এবং দুই জোট তথা ইসলামপন্থী দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি মিলে নির্বাচনী উৎসব (!) পালন করে সরকারকে আবার বিপুল ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ করে দিবে সেটা নিয়েও চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলছে। 

এদিকে বিএনপির ভাবসাব এবং বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে ম্যারাথন বৈঠক থেকে আরো একটি জিনিস আভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেটা হলো ড. ইউনুসকে কেন্দ্র। কেউ কেউ বলছেন, তাকে নির্বাচনকালীণ সরকার গঠন ও ভবিষ্যতে তাকেই দেশের প্রেসিডেন্ট বানিযে পাশ্চাত্যের আশির্বাদ লাভের চেষ্টা করছে বিএনপি। সে সূত্র ধরেই বিএনপিতে উজ্জীবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা মনে করছে, এবার যে কোনো মূল্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারলে লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করা যাবে। এরজন্য মাঠ গরম করা আবশ্যক। সেই কাজটাই বিএনপি করে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিদেশিরা মাঠ গরম না হলে তাদের উদ্দেশ্য সাধন করতে সক্ষম হবে না। সরকারকেও চাপে ফেলতে পারবে না। বিএনপি যদি একবার দলীয় কর্মীদের মধ্যে এই আস্থা জাগাতে পারে যে, এবার প রিবর্তন হবেই, তাহলে কর্মীরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পড়বে। গত ১৩/১৪বছরে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কর্মীরা অনেকেই  এলাকা ও দেশ ছাড়া। 

তাই বুঝা যাচ্ছে না কী ঘটতে যাচ্ছে আগামী দিনে। সম্প্রতি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতও একটি রহস্যজনক বার্তা প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ভারত কোনো দলের সাথে নয়, বরং দেশের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। অপরদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে একজন টেক্সটটাইল প্রতিমন্ত্রী রিসিভ করে কী বার্তা দিয়েছে সেটাও রহস্যজনক। অপরদিকে দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের লংঘন করলেও দেশ শক্ত হাতে প্রতিবাদ করতে পারছে না। এসব মিলে মনে হচ্ছে সরকার ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে। একবার যদি এমন আওয়াজ তোলা যায়, তাহলে ব্যাপক দুর্ণীতিগ্রস্থ প্রশাসনও চুপ করে যেতে পারে। তাতে সরকারের পতন অনীবার্য হয়ে উঠবে।


লেখক: জেনারেল সেক্রেটারী,বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট বিআইএম